বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭

সোনার_বাংলার_আদিকথা। এসো সবাই জেনে নিই।

"হিন্দু কবি সাহিত্যিকগণ মুসলমানদের ম্লেচ্ছ, যবন, নেড়ে, পাষন্ড, পাপিষ্ঠ, পাপাত্মা, দুরাত্মা, দুরাশয়, নরাধম, নরপিশাচ, পাতকী, বানর, এঁড়ে, দেড়ে, ধেড়ে, অজ্ঞান, অকৃতজ্ঞ, ইতর এ জাতীয় কোনো গালি দিতে কার্পণ্য করেনি। বঙ্কিম চন্দ্রের ‘মৃণালীনী’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘রাজ সিংহ’ ও ‘কবিতা পুস্তক’, ইশ্বর গুপ্তের ‘কবিতা সংগ্রহ’ দামোদর মুখোপাধ্যয়ের ‘প্রতাপসিংহ’ যজ্ঞেশ্বর মুখোপাধ্যয়ের বঙ্গানুবাদিত ‘রাজস্থান’ দীন বন্ধু মিত্রের ‘জামাই বারিক’ ইত্যাদি ইসলাম ও মুসলমান বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮৩৮-১৯০৩ খ্রি.) কাব্যসজ্জায় সুস্পষ্ট মুসলমান বিদ্বেষ পাওয়া যায় ।

"হেমচন্দ্র তাঁর বীরবাহুতে (১৮৬৪ খ্রি.) লিখেছে – আরে রে নিষ্ঠুর জাতি পাষণ্ড বর্বর পুরাব যবন-রক্তে শমন-খর্পর’। [ডক্টর মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, আধুনিক বাংলা কাব্যে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক,  প্রথম প্রকাশ, ঢাকা, বাংলা একাডেমী, ১৯৭০]।

"বহু কাল থেকেই বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন হিন্দু কবি সাহিত্যিকদের ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িকতা ও চরম বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন মুসলমানরা। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৮২৭-৮৭ খ্রি.) পদ্মিনী উপাখ্যানে (১৮৫৮ খ্রি.) স্বাধীনতার কামনা, পরাধীনতার বেদনা, দেশপ্রীতি এবং বিদেশাগত মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৭৯ তে প্রকাশিত অশ্রুমতী নাটক উৎসর্গ করেন অনুজ রবীন্দ্রনাথকে। এবং উক্ত নাটক ছিল মুসলিম বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। উক্ত নাটকের সৈন্যগণ বলছে, “আজ আমরা যুদ্ধে প্রাণ দেব, চিতোরের গৌরব রক্ষা করব, মুসলমান রক্তে আমাদের অসির জ্বলন্ত পিপাসা শান্ত করব”… (অশ্রুমতী : জ্যোতিরিন্দ্রনাথ নাটক সমগ্র, সাহিত্য সংসদ,২০০২, পৃষ্ঠা ১১৩।)]।

"ইংরেজদের সাথে যুদ্ধরত মুসলমানদের মৃত্যুতে খুশী হয়ে ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত রচনা করেছিলেন;

একেবারে মারা যায় যত চাঁপদেড়ে (দাড়িওয়ালা)

হাঁসফাঁস করে যত প্যাঁজ (পিঁয়াজ) খোর নেড়ে

বিশেষত: পাকা দাড়ি পেট মোটাভূড়ে

রোদ্র গিয়া পেটে ঢোকে নেড়া মাথা ফূড়ে

কাজি কোল্লা মিয়া মোল্লা দাঁড়িপাল্লা ধরি

কাছা খোল্লা তোবাতাল্লা বলে আল্লা মরি

এই কবিতায় চরম মুসলিম বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। শুধু তাই নয় ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত স্পষ্টতই ব্রিটিশদের দালাল ছিলেন। তাইতো তিনি লিখেছিলেনঃ
'ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়
মুক্তমুখে বল সবে ব্রিটিশের জয়!  (দিল্লীর যুদ্ধ : গ্রন্থাবলী,পৃ. ১৯১)।]

"বঙ্কিমচন্দ্র তার শেখা প্রায় সবকটি গালি ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করেছে। ‘ম্লেচ্ছ’ হতে শুরু করে ‘যবন’ পর্যন্ত। এমনকি প্রাচীনকালে বৌদ্ধদের দেয়া ‘নেড়ে’ গালিটাকেও সে দিতে বাদ রাখেনি। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘আনন্দ মঠ’ (১৮৮২) উপন্যাসে এক মন্তব্যে বলেন, ‘‘ধর্ম গেল, জাত গেল, মান গেল, কূল গেল, এখনতো প্রাণ পর্যন্ত যায়। এ নেড়েদের (মুসলমানদের) না তাড়াইলে আর কি হিন্দুয়ানি থাকে’’। এমনকি গল্পের মাধ্যমে মসজিদ ভেঙে মন্দির গড়ার ইচ্ছাও প্রকাশ পেয়েছে এ উপন্যাসে; “ভাই, এমন দিন কি হইবে, মসজিদ ভাঙ্গিয়া রাধা মাধবের মন্দির গড়িব?” [আনন্দমঠ, তৃতীয় খন্ড, অষ্টম পরিচ্

"শুধু তাই নয়, “তিনি ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এ দানেশ খাঁকে দিয়ে মুসলমানদেরকে ‘শুয়ার’ বলে গালি দিয়েছেন। ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসে কতিপয় স্ত্রীলোককে দিয়ে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মুখে লাথি মারার ব্যবস্থা করেছেন। ‘মৃণালিনী’তে বখতিয়ার খিলজীকে ‘অরণ্য নর’ বলেছেন। কবিতা পুস্তকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আসে আসুক না আরবী বানর – আসে আসুক না পারসী পামর’’। (আফজাল চৌধুরীর শেষ কবিতা: মুকুল চৌধুরী, দৈনিক সংগ্রাম,ঈদসংখ্যা-২০১২)।

"রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বলেছিলেন, ‘মুসলমানরা একমাত্র বেয়াদব যাহারা হিন্দু পরিচয় স্বীকার করিবে না’। (বণিক বার্তা)

"রবীন্দ্রনাথ তার ‘রীতিমত নভেল’ নামক ছোটগল্পে মুসলিম চরিত্র হরণ করেছে এভাবে-ঃ
'আল্লা হো আকবর’ শব্দে রণভূমি প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিয়াছে। একদিকে তিনলক্ষ যবনসেনা, অন্যদিকে তিনসহস্র আর্যসৈন্য। হর হর বোম্‌ বোম্‌! পাঠক বলিতে পার, কে ঐ দৃপ্ত যুবা পঁয়ত্রিশজন মাত্র অনুচর লইয়া মুক্ত অসি হস্তে অশ্বারোহণে ভারতের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর করনিক্ষিপ্ত দীপ্ত বজ্রের ন্যায় শত্রুসৈন্যের উপরে আসিয়া  পতিত  হইল?  বলিতে  পার,  কাহার  প্রতাপে  এই অগণিত  যবনসৈন্য  প্রচণ্ড  বাত্যাহত অরণ্যানীর  ন্যায়  বিক্ষুব্ধ  হইয়া  উঠিল?—  কাহার বজ্রমন্দ্রিত  ‘হর  হর  বোম্‌  বোম্‌’ শব্দে  তিনলক্ষ ম্লেচ্ছকণ্ঠের  ‘আল্লা  হো  আকবর’   ধ্বনি  নিমগ্ন  হইয়া  গেল? ইনিই সেই ললিতসিংহ। কাঞ্চীর সেনাপতি। ভারত-ইতিহাসের ধ্রুব নক্ষত্র। (যদ্যপি আমার গুরু, আহমদ ছফা, পৃষ্ঠা ৫৬)
             
"ঐ প্রবন্ধে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মুসলমানদের পাণ্ডা বলে সম্ভোদন করেন। বলেন; “হিন্দুস্থান হিন্দুর দেশ। হিন্দু-মুসলমান-মিলন একটা গালভরা শব্দ। বস্তুতঃ, মুসলমান যদি কখনও বলে—হিন্দুর সহিত মিলন করিতে চাই, সে যে ছলনা ছাড়া আর কি হইতে পারে, ভাবিয়া পাওয়া কঠিন। একদিন মুসলমান লুণ্ঠনের জন্যই ভারতে প্রবেশ করিয়াছিল, রাজ্য প্রতিষ্ঠা করিবার জন্য আসে নাই। সেদিন কেবল লুঠ করিয়াই ক্ষান্ত হয় নাই, মন্দির ধ্বংস করিয়াছে, প্রতিমা চূর্ণ করিয়াছে, নারীর সতীত্ব হানি করিয়াছে, বস্তুতঃ অপরের ধর্ম ও মনুষ্যত্বের উপরে যতখানি আঘাত ও অপমান করা যায়, কোথাও কোন সঙ্কোচ মানে নাই।” (বিস্তারিত দেখুনঃ হিন্দু-মুসলমান সমস্যাঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাম্প্রদায়িক চেহারা– সম্পাদক) ]

"কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেহেতু বিশ্ব কবি, একটি স্বতন্ত্র পর্ব লিখে এই বিষয়ে ইতি টানার  আশা পোষণ করছি। তথ্যসংগ্রহ করা এবং আঙুল টিপে লিখা আমার জন্য একটু সাধ্য ব্যাপার..! তারপর..শুধু আপনাদের সহযোগিতা কাম্য!
চলবে.........  ইনশাহ আল্লাহ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

একুশের আক্ষেপানুরাগ

বেশ কয়েক বছর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির অঙ্গীকার ছিল অফিস আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিদেশী ভাষার ব্যবহার কমানো, ব্যানার, ফেস...