সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

ভূমিকা: মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে | এ ভাষার গুনেই পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে মানুষ সতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী | মানুষ তার হাসি-আনন্দ,দুক্ষ বেদনা সবকিছুই প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে | মাতৃভাষার এ গুরুত্বের কথা ভেবেই পৃথিবীর সব দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মাতৃভাষার মাধ্যমে | মাতৃভাষা দিয়েই শিশুর মনে স্বদেশ প্রেমের সূত্রপাত ঘটে | আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলা | ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকাতরে জীবন দিয়ে, তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা |

"আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,
আমিকি ভুলিতে পারি | "

একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরব ময় ও ঐতিয্যবাহী দিন | বাংলায় জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উত্স হচ্ছে এই দিন টি | বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি | ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায়  বাঙালির রক্ত ঝরা এ দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ,সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি | তাই একুশে ফেব্রুয়ারী এখন শুধু আমাদের মাতৃভাষা দিবস না ; প্রতি বছর 'একুশে ফেব্রুয়ারী' পালিত হচ্ছে " আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস " হিসেবে | এ দিবসটির তাত্পর্য উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ন আজাদ বলেছেন, " আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছ, আমার প্রানের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে | সত্তিই  আমি গর্বিত "

ভাষা আন্দোলনের

ঐতিহাসিক পটভূমি :
   ক. ভাষা আন্দোলনের আদি কথা : পাকিস্থান সৃষ্ঠির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড়মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য  ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন | পূর্ববঙ্গ থেকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি জানান (১১-ই শ্রাবন,১৩৫৪  বঙ্গাব্দ) | এভাবেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে |

খ. বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা : দ্বি-জাতি তত্তের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্থান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে | পূর্ব বাংলায় মসুলমানরা ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ | তাই পূর্ব বাংলাকে পাকিস্থানের অন্তরভুক্তি করা হয় | পাকিস্থান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্থান অর্থাত বাংলাদেশের শিক্ষা,শিল্প,সংস্কৃতি ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়  যার পরিপ্রেক্ষিতে  সৃষ্টি হয় ভাষা আন্দোলন | পাকিস্থানের নব্য উপনিবেশবাদী,ক্ষমতালোভী , উদ্ধত শাসকরা শুরু থেকেই এদেশের মানুষের  উপর নির্জাননের স্টিম রোলার চালাতে থাকে | প্রথমেই তারা ফন্দি আঁটে কিভাবে এদেশের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া  যায় | পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠী পাকিস্থানের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু কে গ্রহণ করতে সচেষ্ট হন ; যদিও বাস্তবে উর্দু ভাষাভাষী লোকের অনুপাত ছিল অনেক কম |
তালিকা:

বাংলা---> ৫৪.৬%
পাঞ্জাবি--> ২৭.১%
পশতু---> ৬.১%
উর্দু------> ৬%
সিন্ধি ---> ৪.৮%
ইংরেজি ---> ১.৪%

সূত্র : বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন, লেখক: ড. আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া,পৃষ্ঠা : ১৭০

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় : ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভারত বিভাগের ১৯ তম দিনে " তমুদ্দন মজলিস " গঠন করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা    বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সংস্কিতিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেন | ঐ বছরের ১৫ই সেম্পেম্বর রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে "পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু " শিরোনামে এই সংগঠনের উদ্যোগে ঘোষণা পত্র-পুস্তিকা প্রকাশ করা হয় ---যা ভাষা আন্দোলনের ঘোষণা পরত নামে পরিচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেমী মূলত রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিকে আন্দোলনে রূপ দেয়ার প্রথম উদ্যোক্তা \ তার উদ্যোগেই তমুদ্দন মজলিস নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় | তার সাথে ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া , সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও শাসুল আলম |

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচিতে এক কেন্দ্রীয়পর্জায়ের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় | সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত নেব হয় | পূর্ব বাংলা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিবাদ করে | ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাসে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ঢাকায় সর্ব প্রথম রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং কতিপয় দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নীতি গঠিত হয় |

১. বাংলা ভাষা হবে পূর্ব বাংলার একমাত্র শিক্ষার বহন এবং অফিস -আদালতের প্রধান মাধ্যম |

২. পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হবে দুইটি -বাংলা ও উর্দু |

খ. ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্থান গণ পরিষদের প্রথন অধিবেশনে কংগ্রেস দলীয় সদস্য গণ বিশেষত কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি জানান ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহার করার জন্য | কিন্তু পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এ নীতির বিরোধিতা করে বলেন "(the more) should realize that Pakistan has been created because of the demand of one hundred million Muslims in the subcontinent and the language of a hundred million Muslims is Urdu"
উৎস : Constituent Assembly of Pakistan Debates,vol-2

লিয়াকত আলী খানের এই উক্তির ফলে ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে চরম অসন্তোষ দেখা দেয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয় | অবশেষে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষার দাবি সমর্থনের আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রশমিত হয় | কিন্তু ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ  মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার প্রথম পূর্ব পাকিস্থান সফরে এসে ঢাকার রমনা রেসকোর্সে এক জনসভায় ঘোষণা করেন  " উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা |" (Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan)  তিন দিন পরে কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উত্সবে তিনি যখন একই ঘোষণার পুনরাবৃতি করেন,তখন উপস্থিত ছাত্ররা না না না ....... বলে এর প্রতিবাদ জানায় |

গ. ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায় : ১৯৫০ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং ১৯৫২ সালের ৯০ জানুয়ারী খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় একই ঘোষণা দেন যে উর্দুই হবে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা | ফলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবী মহলে দারুন ক্ষোভ  ও হতাশা তৈরী হয় এবং আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে | এ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৩০ জানুয়ারী ঢাকাত সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট ওয়ালিত হয় | আন্দোলনকে তীব্রতর করার লক্ষে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারী এক জনসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সগ্রাম গঠিত হয় | এ কমিটিতে আবুল কাশেম , সাপ্তাহিক দৈনিক থেকে গফুর , রাজ্নৈতিক্ফ্রন্ট থেকে আবুল হাশিম , শ্রমিক ফ্রন্ট মজদুর ফেডারেশন থেকে এডভোকেট নুরুল হুদা , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে  চৌধুরী শাহাবুদ্দিন আহমেদ খালেদ,ঢাকা সিটি তমুদ্দন মজলিস থেকে মাহফুজু হোক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হুদা সদস্য ছিলেন | আহ্বায়ক ছিলেন মাহম্বুব | এ কমিটিতে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবস হিসাবে পালন করার এবং সারা দেশে হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় |

ঘ. ঐতিহাসিক মিছিল ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ : ২১ ফেব্রুয়ারির উক্তকর্মশুচিকে বানচাল করার জন্য তখন কার গভর্নর নুরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন | কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতা এতে ভয় পায় নাই | তারা এতে কোনো রূপ ভ্রুক্ষেপ না করে সগ্রাম চালিয়ে যায় | সরকার কর্তিক জারি কৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল অগ্রসর হয় এবং কিছুদুর অগ্রসর হয়ে মিছিল যখন ঢাকা মেডিকেল কলেগের সামনে আসে ঠিক তখনি পুলিস মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ করে | ফলে মিছিল কিছুটা ছত্র ভঙ্গ হয় এবং রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার সহ আরও  নাম না জানা অনেক ছাত্র শহীদ হন | সরকারের এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দু দু করে  জ্বলে ওঠে | ছাত্রদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে নেমে আসেন এবং প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে |

রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসাবে স্বীকৃতি ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের আপামর ছাত্র সমাজ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে মাতৃভাষা বাংলা অর্জিত হয়েছে তার গন্ডি তখন শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না | বরং একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চেতনা আজ চড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র | ভাষার জন্য বাঙালি জাতির এ আত্মত্যাগ আজ নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে | ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি সংস্থার(ইউনেস্কো)  সাধারণ পরিষদ তার ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশের সমর্থনে সর্ব সম্মত ভাবে আমাদের জাতীয় চেতনার ধারণ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে | ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয় " ১৯৫২  সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ  এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহীদ দের সৃতিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো | প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮ টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে | " ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস |

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ফোরামে তথা বিশ্ব সভায় তলার বেপারে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব রাখেন দুই বাঙালি | তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম | তারা আরো কিছু মাতৃভাষা প্রিয় অন্য ভাষাভাষী বেক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলেন 'মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দা ওয়ার্ল্ড" নামে একটি সংস্থা | ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারী তারিখে তারাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান বরাবর আবেদন পত্র পাঠান | মহাসচিবের অফিস থেকে ইউনেস্কো বরাবর একটি আবেদন পাঠাতে বলা হয় | উক্ত আবেদন পত্রে পৃথিবীর ৭ টি ভাষার মোট ১০ জন লোক সংস্থার পক্ষে সাক্ষর করেন | সে আবেদন ইউনেস্কোর এডুকেশন ডিভিশনে পৌছালে সেখানকার প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আনা মারিয়া জানান কোনো বেসরকারী সংস্থার প্রস্তাব তারা বিবেচনা করবেন না | আবেদনকারীদের পক্ষে যদি কোনো দেশের সরকার যদি উদ্যোগী হয়,তাহলে ইউনেস্কো তা বিবেচনা করে দেখবে | তখন কানাডা প্রবাসী রফিক ও সালাম সরকারের তৎকালীন শিক্ষা সচিব জনাব রকিব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন | শিক্ষা সচিব তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জনাব এ.এম.এইচ কে সাদেক কে বিষয়টি অবহিত করেন | শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে অবশেষে বিষয়টই তত্কালীন প্রধান মন্ত্রীর গচরিভুক্ত হয় | তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে খুবই উৎসাহ বোধ করেন| তিনি তাৎক্ষনাত প্রয়োজনীয় বেবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রীকে নির্দেশ দেন | অত:পর সে প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিসের উদ্দেশ্শে রওনা হন | সেখানে ইউনেস্কোর ৩০ তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্ব সম্মত ভাবে পাশ হয় | কৃতজ্ঞতা জানায় "লাভার্স অব দা মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব" এর দুই প্রবাসী সাংগঠনিক সালাম রফিককে এবং সেইসাথে ইউনেস্কো সহ সংস্লিষ্ট সবাইকে |

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনাঃ  শেয়ার করুন :)

আন্তর্জাতিক মাতৃ  ভাষা দিবস

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

     ভূমিকা: মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে | এ ভাষার গুনেই পৃথিবীর সকল প্রাণী থেকে মানুষ সতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী | মানুষ তার হাসি-আনন্দ,দুক্ষ বেদনা সবকিছুই প্রকাশ করে ভাষার মাধ্যমে | মাতৃ ভাষার এ গুরুত্বের কথা ভেবেই পৃথিবীর সব দেশেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় মাতৃ ভাষার মাধ্যমে | মাতৃ ভাষা দিয়েই শিশুর মনে স্বদেশ প্রেমের সূত্রপাত ঘটে | আমাদের মাতৃ ভাষা বাংলা | ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকাতরে জীবন দিয়ে, তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা |

"আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,
আমিকি ভুলিতে পারি | "

একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালির জাতীয় জীবনে এক গৌরব ময় ও ঐতিয্যবাহী দিন | বাংলায় জাতীয় জীবনের সকল চেতনার উত্স হচ্ছে এই দিন টি | বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার ঐতিহাসিক দিন এটি | ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারী মাতৃ ভাষার মর্যাদা রক্ষায়  বাঙালির রক্ত ঝরা এ দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কো 'আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ,সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের প্রতি | তাই একুশে ফেব্রুয়ারী এখন শুধু আমাদের মাতৃ ভাষা দিবস না ; প্রতি বছর 'একুশে ফেব্রুয়ারী' পালিত হচ্ছে " আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস " হিসেবে | এ দিবসটির তাত্পর্য উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত ভাষা বিজ্ঞানী ড. হুমায়ন আজাদ বলেছেন, " আমি মুগ্ধ, আমি প্রীত, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছ, আমার প্রানের কথা আমার ভাষায় জানাতে পারব বলে আমার হৃদয় স্পন্দন বেড়েছে | সত্তিই  আমি গর্বিত "

ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক পটভূমি :

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

   ক. ভাষা আন্দোলনের আদি কথা : পাকিস্থান সৃষ্ঠির অব্যবহিত পূর্বে আলীগড়মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয়ের তত্কালীন উপাচার্য  ড. জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করেন | পূর্ব বঙ্গ থেকে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি জানান(১১-ই শ্রাবন,১৩৫৪  বঙ্গাব্দ) | এভাবেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে |

খ. বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা : দ্বি-জাতি তত্তের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্থান রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে | পূর্ব বাংলায় মসুলমানরা ছিল সংখ্যা গরিষ্ঠ | তাই পূর্ব বাংলাকে পাকিস্থানের অন্তরভুক্তি করা হয় | পাকিস্থান সৃষ্টির পর থেকে পাকিস্থানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্থান অর্থাত বাংলাদেশের শিক্ষা,শিল্প,সংস্কৃতি ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়  যার পরিপ্রেক্ষিতে  সৃষ্টি হয় ভাষা আন্দোলন | পাকিস্থানের নব্য উপনিবেশবাদী,ক্ষমতালোভী , উদ্ধত শাসকরা শুরু থেকেই এদেশের মানুষের  উপর নির্জাননের স্টিম রোলার চালাতে থাকে | প্রথমেই তারা ফন্দি আঁটে কিভাবে এদেশের মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়া  যায় | পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠী পাকিস্থানের এক মাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু কে গ্রহণ করতে সচেষ্ট হন ; যদিও বাস্তবে উর্দু ভাষাভাষী লোকের অনুপাত ছিল অনেক কম |
তালিকা:

বাংলা---> ৫৪.৬%
পাঞ্জাবি--> ২৭.১%
পশতু---> ৬.১%
উর্দু------> ৬%
সিন্ধি ---> ৪.৮%
ইংরেজি ---> ১.৪%

সূত্র : বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়ন, লেখক: ড. আব্দুল ওয়াদুদ ভুইয়া,পৃষ্ঠা : ১৭০

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় : ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ভারত বিভাগের ১৯ তম দিনে " তমুদ্দন মজলিস " গঠন করে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা    বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে সংস্কিতিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেন | ঐ বছরের ১৫ই সেম্পেম্বর রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে "পাকিস্থানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু " শিরোনামে এই সংগঠনের উদ্যোগে ঘোষণা পত্র-পুস্তিকা প্রকাশ করা হয় ---যা ভাষা আন্দোলনের ঘোষণা পরত নামে পরিচিত | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেমী মূলত রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিকে আন্দোলনে রূপ দেয়ার প্রথম উদ্যোক্তা \ তার উদ্যোগেই তমুদ্দন মজলিস নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় | তার সাথে ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক নুরুল হক ভুইয়া , সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও শাসুল আলম |

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে করাচিতে এক কেন্দ্রীয়পর্জায়ের শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় | সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত নেব হয় | পূর্ব বাংলা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিবাদ করে | ১৯৪৮ সালের জানুয়ারী মাসে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ঢাকায় সর্ব প্রথম রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় এবং কতিপয় দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নীতি গঠিত হয় |

১. বাংলা ভাষা হবে পূর্ব বাংলার একমাত্র শিক্ষার বহন এবং অফিস -আদালতের প্রধান মাধ্যম |

২. পাকিস্থানের রাষ্ট্র ভাষা হবে দুইটি -বাংলা ও উর্দু |

খ. ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় : ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্থান গণ পরিষদের প্রথন অধিবেশনে কংগ্রেস দলীয় সদস্য গণ বিশেষত কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত দাবি জানান ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহার করার জন্য | কিন্তু পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এ নীতির বিরোধিতা করে বলেন "(the more) should realize that Pakistan has been created because of the demand of one hundred million Muslims in the subcontinent and the language of a hundred million Muslims is Urdu"
উৎস : Constituent Assembly of Pakistan Debates,vol-2

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

লিয়াকত আলী খানের এই উক্তির ফলে ঢাকায় ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে চরম অসন্তোষ দেখা দেয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী সর্বত্র ধর্মঘট পালিত হয় | অবশেষে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষার দাবি সমর্থনের আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রশমিত হয় | কিন্তু ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ  মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার প্রথম পূর্ব পাকিস্থান সফরে এসে ঢাকার রমনা রেসকোর্সে এক জনসভায় ঘোষণা করেন  " উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা |" (Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan)  তিন দিন পরে কার্জন হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উত্সবে তিনি যখন একই ঘোষণার পুনরাবৃতি করেন,তখন উপস্থিত ছাত্ররা না না না ....... বলে এর প্রতিবাদ জানায় |

গ. ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায় : ১৯৫০ সালে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান এবং ১৯৫২ সালের ৯০ জানুয়ারী খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় একই ঘোষণা দেন যে উর্দুই হবে পাকিস্থানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা | ফলে ছাত্র-বুদ্ধিজীবী মহলে দারুন ক্ষোভ  ও হতাশা তৈরী হয় এবং আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে | এ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ৩০ জানুয়ারী ঢাকাত সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট ওয়ালিত হয় | আন্দোলনকে তীব্রতর করার লক্ষে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারী এক জনসভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সগ্রাম গঠিত হয় | এ কমিটিতে আবুল কাশেম , সাপ্তাহিক দৈনিক থেকে গফুর , রাজ্নৈতিক্ফ্রন্ট থেকে আবুল হাশিম , শ্রমিক ফ্রন্ট মজদুর ফেডারেশন থেকে এডভোকেট নুরুল হুদা , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে  চৌধুরী শাহাবুদ্দিন আহমেদ খালেদ,ঢাকা সিটি তমুদ্দন মজলিস থেকে মাহফুজু হোক এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ার নুরুল হুদা সদস্য ছিলেন | আহ্বায়ক ছিলেন মাহম্বুব | এ কমিটিতে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবস হিসাবে পালন করার এবং সারা দেশে হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় |

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

ঘ. ঐতিহাসিক মিছিল ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ : ২১ ফেব্রুয়ারির উক্তকর্মশুচিকে বানচাল করার জন্য তখন কার গভর্নর নুরুল আমিন সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন | কিন্তু পূর্ব বাংলার ছাত্র-জনতা এতে ভয় পায় নাই | তারা এতে কোনো রূপ ভ্রুক্ষেপ না করে সগ্রাম চালিয়ে যায় | সরকার কর্তিক জারি কৃত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে থেকে শান্তিপূর্ণ মিছিল অগ্রসর হয় এবং কিছুদুর অগ্রসর হয়ে মিছিল যখন ঢাকা মেডিকেল কলেগের সামনে আসে ঠিক তখনি পুলিস মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ করে | ফলে মিছিল কিছুটা ছত্র ভঙ্গ হয় এবং রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার সহ আরও  নাম না জানা অনেক ছাত্র শহীদ হন | সরকারের এই বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে বিদ্রোহের আগুন দু দু করে  জ্বলে ওঠে | ছাত্রদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে শহীদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে নেমে আসেন এবং প্রবল প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে ওঠে |

রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসাবে স্বীকৃতি ও বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এদেশের আপামর ছাত্র সমাজ বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে যে মাতৃভাষা বাংলা অর্জিত হয়েছে তার গন্ডি তখন শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না | বরং একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের চেতনা আজ চড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র | ভাষার জন্য বাঙালি জাতির এ আত্মত্যাগ আজ নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে | ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ জাতিসংঘের শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি সংস্থার(ইউনেস্কো)  সাধারণ পরিষদ তার ৩০ তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশ সহ ২৭ টি দেশের সমর্থনে সর্ব সম্মত ভাবে আমাদের জাতীয় চেতনার ধারণ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে | ইউনেস্কোর প্রস্তাবে বলা হয় " ১৯৫২  সালের একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বাংলাদেশের অনন্য ত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ  এবং ১৯৫২ সালের এই দিনের শহীদ দের সৃতিকে সারা বিশ্বে স্মরণীয় করে রাখতে একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো | প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর ১৮৮ টি সদস্য দেশ এবং ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হবে | " ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী প্রথম পালিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস |

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক ফোরামে তথা বিশ্ব সভায় তলার বেপারে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব রাখেন দুই বাঙালি | তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম | তারা আরো কিছু মাতৃভাষা প্রিয় অন্য ভাষাভাষী বেক্তিদের নিয়ে গড়ে তোলেন 'মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অব দা ওয়ার্ল্ড" নামে একটি সংস্থা | ১৯৯৮ সালের ৯ জানুয়ারী তারিখে তারাই একুশে ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' ঘোষণার জন্য জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান বরাবর আবেদন পত্র পাঠান | মহাসচিবের অফিস থেকে ইউনেস্কো বরাবর একটি আবেদন পাঠাতে বলা হয় | উক্ত আবেদন পত্রে পৃথিবীর ৭ টি ভাষার মোট ১০ জন লোক সংস্থার পক্ষে সাক্ষর করেন | সে আবেদন ইউনেস্কোর এডুকেশন ডিভিশনে পৌছালে সেখানকার প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট আনা মারিয়া জানান কোনো বেসরকারী সংস্থার প্রস্তাব তারা বিবেচনা করবেন না | আবেদনকারীদের পক্ষে যদি কোনো দেশের সরকার যদি উদ্যোগী হয়,তাহলে ইউনেস্কো তা বিবেচনা করে দেখবে | তখন কানাডা প্রবাসী রফিক ও সালাম সরকারের তৎকালীন শিক্ষা সচিব জনাব রকিব উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করেন | শিক্ষা সচিব তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী জনাব এ.এম.এইচ কে সাদেক কে বিষয়টি অবহিত করেন | শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে অবশেষে বিষয়টই তত্কালীন প্রধান মন্ত্রীর গচরিভুক্ত হয় | তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে খুবই উৎসাহ বোধ করেন| তিনি তাৎক্ষনাত প্রয়োজনীয় বেবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রীকে নির্দেশ দেন | অত:পর সে প্রস্তাব নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রী একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ইউনেস্কোর সদর দপ্তর প্যারিসের উদ্দেশ্শে রওনা হন | সেখানে ইউনেস্কোর ৩০ তম অধিবেশনে প্রস্তাবটি সর্ব সম্মত ভাবে পাশ হয় | কৃতজ্ঞতা জানায় "লাভার্স অব দা মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব" এর দুই প্রবাসী সাংগঠনিক সালাম রফিককে এবং সেইসাথে ইউনেস্কো সহ সংস্লিষ্ট সবাইকে |

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

স্বাধিকার চেতনা : ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির মাঝে এ চেতনার উন্মেষ হয়েছিল, তার চরম বিস্ফোরণ ঘটে উনসত্তর থেকে একাত্তরে | একুশে ফেব্রুয়ারির  তাৎপর্য শহীদ দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে নাই,তা বাঙালি জাতীয় জীবনে সর্বত্র প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে | ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন নিয়ে বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে লিপ্ত হয় | ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামে উদ্ভুদ্ধ হয়েই বাঙালি জাতি পরবর্তিতে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির প্রতিটি ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয় | ১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে,১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি স্তরে প্রেরণা যুগিয়েছে ভাষা আন্দোলনের রক্তঝরা ইতিহাস | একুশ আমাদের স্বাধিকার চেতনার ভিত্তিমূল, একুশ-ই বাঙালি স্বাধীনতার প্রথম স্পর্শ | সেদিন তাঁরা স্বাধিকারের যে চেতনায় উজ্জীবিত  হয়েছিলেন, তারই স্রোতধারায় বাঙালি জাতি ১৯৭১- এ ঝাঁপিয়ে পরেছিল মুক্তিযুদ্ধে | সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে বিজয়ের মাধ্যমে আমরা লাভকরি স্বাধীন মাতৃভূমি বাংলাদেশ |


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য : ভাষা একটি দেশের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক | মাতৃভাষার প্রচলন কেবল জাতগত বৈচিত্র, বহু ভাষা ভিত্তিক শিক্ষাকেই উত্সাহ্ত করবে না, তা ভাষা গত ও সংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উন্নয়ন ও অনুধাবনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে | আন্তর্জাতিক মাত্রভাষা দিবসের তাত্পর্য হলো-- সকল মাতৃভাষাকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দেয়া , যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া বিলুপ্তর হাত থেকে রক্ষা করা, দুর্বল বলে কোনো ভাষার উপর প্রভুত্ব আরপেক অপচেষ্টা ঠেকানো, ছোট-বড় সব ভাষাকে সমান মর্যাদা প্রদর্শন |  এ দিবসে প্রত্যেক ভাষাভাষী মানুষ নিজের মাতৃভাষাকে ভালবাসবে, তেমনি অন্য জাতির মত্রিভশকেব মর্যাদা দিবে | এভাবে একুশের চেতনাকে ধারণ করে মাতৃভাষাকে ভালবাসার  প্রেরণা পাবে মানুষ | মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য লুকিয়ে আছে দেশকে,দেশের মানুষকে ও দেশের সংস্কৃতিকে ভালবাসা আর তার জন্য গর্ব বোধ করার মধ্যে |

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]
মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ : মার্তিভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস বিশ্বের দর্ব্বারে তুলে ধরার জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে | তা নিম্নরূপ :

ক. মাতৃভাষা গবেষণা কেন্দ্র শ্তাপনের সিদ্ধান্ত : আমাদের মার্তিভাশাকে নিয়ে গবেষণা এবং পৃথিবীর সকল মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি 'মাতৃভাষা চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ নিয়েছে | গোটা পৃথিবীর পাঁচ হাজার মাতৃভাষার ভেতরে যেন কোনটি হারিয়ে না যায়, এ কেন্দ্রে সে বেবস্থাই করা হবে | বেবস্থা থাকবে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার | ফলে, এ কেন্দ্র একদিন বিশ্বের সকল ভাষা সংরক্ষণের সহায়ক হবে|

খ. সিডি ও ভিডিও ক্যাসেট তৈতীত পরিকল্পনা :  বাংলাভাষার উত্পত্তি,বিবর্তন ও পরিচয় বর্ণনা করে তৈরী একটি ভিডিও ক্যাসেট বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে |

[all rights reserved by http://www.education-bd.org|Online Education In Bangladesh]

জাতীয়  শিক্ষা কার্যক্রমে মাতৃভাষার প্রচলন : বাংলাদেশের মানুষের রাষ্ট্রভাষা ও মাতৃভাষা বাংলা | কিন্তু জিবিনের সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও প্রচলন হয় নি | ব্যবসা-বাণিজ্যে,অফিস-আদালতে, উচ্চতর শিক্ষা বেবস্থায় বাংলাভাষা কে যথাযথ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না | আমরা যদি জাতি হিসাবে বিশ্বের দরবারে আসন লাভ করতে চাই, তাহলে, উচ্চতর পর্যায়ের বইগুলো বাংলায় অনুবাদ করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছে দিতে হবে | বাংলা প্রথিবীর সপ্তম বৃহৎ ভাষা | আন্তর্জাতিক ভাবে ভাষার প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মাতৃভাষায় জ্ঞান চর্চা করা এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর প্রতি ভালবাসা প্রদান করা আমাদের কর্তব্য | মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা সহ জবনের সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালনা যে সম্ভব, তার বাস্তব প্রমান আধুনিক বিশ্বের চীন, জাপান, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশ | কাজেই আমরা যদি জাতি হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে চাই, তাহলে জবনের  সকল ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে হবে |

উপসংহার : ইউনেস্ক কর্তিক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষিত হবার পর বিশ্বের প্রতিটা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে বাঙালি ও বঙ্গ ভাষার গৌরব |  বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে | এ শুধু বাংলা ভাষার বিশ্বায়ন ই না , বরং বাঙালি জাতির বিজয় | আমাদের শহীদদের আত্ব ত্যাগের জন্যই আজকে আমরা গর্ব করতে পারি। ভাষা আন্দোলনের আদর্শকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে পারলেই বায়ান্নর শহীদদের আত্বদান সার্থক হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

একুশের আক্ষেপানুরাগ

বেশ কয়েক বছর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির অঙ্গীকার ছিল অফিস আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিদেশী ভাষার ব্যবহার কমানো, ব্যানার, ফেস...