সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

বাংলা বানান সমস্যা ও স্বরূপ।

বাংলা নিয়ে মাতামাতি আর চেতনার বহিঃপ্রকাশ কেবল এই ভাষার মাস এলেই দেখতে পাওয়া যায়। অতএব সচেতনতা গেলানোরও মোক্ষম সময় এই ফেব্রুয়ারি।

বাংলা নিয়ে আগেও অনেক চেঁচিয়েছি, এবার আর সেসব ভূমিকা টানব না। সরাসরি সমস্যা নিয়ে আলাপ করব। একজন শিক্ষিত লোক যদি বানান লিখতে ভুল করে তবে সেটা কি লজ্জার নয়?

লজ্জার এই কারণে যে, শিক্ষার অপর নাম সচেতনতা, সার্টিফিকেট নয়। আপনি কী লিখছেন সে সম্পর্কে সচেতন নন। এই আপনি শিক্ষিত? আপনি রসায়ন পড়েছেন, ইংরেজিতে পড়েছেন তাই বলে এটা হতেই পারে না যে আপনি আপনার মাতৃভাষায় ভুল করবেন।

যুক্তির অত অবকাশও নেই, আপনার লজ্জা হওয়া উচিত, এবং লজ্জার কারণে হলেও আপনার এবার বানানের প্রতি অন্তত যত্নবান হওয়া উচিত।

আমাদের বানানে ভুল হওয়ার কারণগুলো কী?

প্রথম কারণ আমাদের উচ্চারণ। আমরা মনে মনে যা উচ্চারণ করি সেটাই তো লিখি। এখন আপনি যদি "রিশকা" উচ্চারণে অভ্যস্ত হন, আপনি বানান জানা সত্ত্বেও লেখার সময় "রিশকা"ই লিখবেন।
আঞ্চলিক উচ্চারণে অনেককেই এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। চট্টগ্রামের অনেকে মনের অজান্তেই কোথায়'কে "কুতাই" লিখে ফেলেন, "তারে" বা তাকে লেখার জায়গায় লিখে বসেন থার বা থাকে! এটা কেবলই উচ্চারণ প্রবণতার দোষ।

সংশোধনটা আপনাদের হাতে।

আমাদের বানান ভুল হবার দ্বিতীয় কারণ হল, আমরা পড়ার সময় ঠিকভাবে অক্ষর বা শব্দগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি না। লেখার সময় আমরা যেমন মনে মনে লেখ্যকে আউড়াই, তেমনই শব্দটাকে কল্পনাও করি। আমরা যাই বলি বা লিখি তার একটা ছবি আমাদের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত থাকে। বলার বা লেখার সময় সেখান থেকে মস্তিষ্ক review করে। আপনি যখন অবস্তুবাচক কোন শব্দ লিখতে চাইবেন, ধরুন, লিখতে চান আমার, তখন খেয়াল করে দেখবেন আপনার মনে ভেসে উঠবে আমার শব্দটির লিখিত রূপ। আপনি নিরীহ লিখতে গিয়ে যদি নীরিহ লিখে বসেন, আপনাআপনিই আপনার মনটা খচ্ করে উঠবে। কারণ এরকম শব্দ আপনার মস্তিষ্কে নেই বলেই আপনার কাছে শব্দটি বেমানান লাগছে।

তাহলে আপনাকে যেটা করতে হবে, যখন কিছু পড়বেন, শব্দগুলোর ছবিও মনে গেঁথে নেবার চেষ্টা করবেন। কাজটা মোটেও কঠিন বা কষ্টের কিছু নয়।

আমি জানি আপনারা প্রত্যেকেই শিক্ষিত। এবং শিক্ষিত মানুষের ঘরে একটি বইও থাকবে না এটা অসম্ভব। আর আমি যে ঘরেই বই দেখি, বিশেষ করে বইয়ের সংগ্রহ দেখি, সে ঘরেই আমার চোখ প্রথম খুঁজতে থাকে একটি বাংলা অভিধান। যার ঘরে পাই না, সেই ঘরের পাঠক কর্তাটির প্রতি আমার আর শ্রদ্ধা থাকে না। কেননা তখন আমি নিশ্চিত জানি যে এই লোকটা বানানে প্রতিনিয়ত অজস্র ভুল করে।

আবারও বলি, আপনার ঘরে টলস্টয় বা বোদলেয়ার থাক বা না থাক, একটি অভিধান থাকা আপনার রুচি এবং সচেতনতা প্রকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

অনেকেই গা বাঁচাতে বলেন, বাংলা খুব কঠিন ভাষা। তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলি, ইংরেজি ভাষার article এবং preposition কতটা কঠিন, ভেবেছেন? জার্মান ভাষার প্রত্যেকটি শব্দের জন্য তার article এবং gender জানা জরুরি। ফ্রেঞ্চ ভাষার কঠিনতম অধ্যায় হচ্ছে pronoun; আর এ দুটি ভাষাতে উচ্চারণের ব্যাপক ঝামেলা তো আছেই। আপনি লিখবেন একটা, সেটাকে পড়া হবে অন্য একটা! লেখা এবং উচ্চারণে আকাশ পাতাল পার্থক্য! সে অর্থে আমাদের বাংলা লক্ষগুণে সহজ, কেবল আপনি এই ভাষাটির প্রতি যত্নবান ছিলেন না কোন দিন।
আর হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তার মাতৃভাষায় দক্ষ নয়, তার পক্ষে অন্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা অসম্ভব।

সমস্যা আপনার, নিজের ভুলকে সংশোধন করার দায়িত্বও আপনার। নইলে আপনারই ব্যক্তিত্বে ত্রুটি থেকে যাবে।

বানানের ভুল সম্পর্কে আরেকটু বলি, আপনারা অনেকেই "ই" এবং "য়" এর পার্থক্যটা বোঝেন না। কারণটা কী?

যায় এবং যাই, খায় এবং খাই ইত্যাদির পার্থক্য কি আপনারা একদমই বোঝেন না??

জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কোথায়?
উত্তর এল, বাসাই।

"যাই" বললে যে আমার যাওয়া বোঝায়, "খাই" বললে যে আমার খাওয়া বুঝায় এবং একইভাবে "যায়" "খায়" বলতে যে অন্য কারো যাওয়া খাওয়া বুঝায় এটা কি আপনারা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছেন না?
(উদা: আমি যাই। সে যায়।)

"য়" এর উচ্চারণ সংক্ষিপ্ত "এ" ধ্বনির মতো। বাসায় লিখলে অনেকটা বাসাএর মতো শোনায়, সেখানে "সায়" উচ্চারণের বদলে "সাই" উচ্চারণটা কীভাবে আপনার মস্তিষ্ক সমর্থন করে আমি ভেবে পাই না!

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিশুশিক্ষার পর্যায় হতেই গলদ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় শিশুর মস্তিষ্কে। সেখানে "ও" কে উচ্চারণ করা হয় "উ", "ঔ" কে উচ্চারণ করা হয় "আউ"। "স্বরে অ" কে পড়া হয় "স্বর-উ"!

স্বরপাঠে ও এবং ল লিখলে উচ্চারণ কী হয়, প্রশ্ন করলে উত্তর আসে উল!
ভুল তো ওখান থেকেই গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সমস্ত শিক্ষকের উচ্চারণ শুদ্ধতার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

আলোচনার প্রসঙ্গ এবার একটু অন্য দিকে নেব।
বাংলা বানানে বৈচিত্র্য বিস্তর। এই বৈচিত্র্য শুরু হয়েছে সেই প্রাচীন কাল হতেই। একেক কবি বা লিপিকার শব্দের বানান তখন থেকেই একেক রকম লিখে আসছেন। সেই যে প্রভেদ, তা আজ পর্যন্ত সমাধান করা যায়নি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী এবং অধুনা আমাদের বাংলা একাডেমি বানান প্রমিতকরণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক অবদান রেখেছে। আমরা সম্প্রতি বানানের একাধিক রূপকে বর্জন করে সহজ এবং সমর্থনযোগ্য রূপগুলোকে বিধেয় করেছেন। এটি অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।
তবে এটাকে আমি এক অর্থে "ছাড় দেওয়া" বলে অভিযুক্ত করি। মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার মতো ভাষাকে যথাসম্ভব সহজ করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে কারণ আমরা আমাদের ভাষার প্রতি এতই অনাগ্রহী! ছাড় না দিয়ে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হলে যত কঠিনই হোক, আমরা আমাদের ভাষা যথাযথভাবে শিখতে বাধ্য হতাম। এই ছাড়টা দেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি।

বাংলা একাডেমি ই কার এবং ঈ কারের মধ্যকার একটি প্রভেদ দেখিয়েছে, ঈ কার কেবলই সংস্কৃতের জন্য। তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশি শব্দের বেলায় ঈ হবে না।

অনেক অংশের মতো আমার এই অংশেও আপত্তি আছে। দেশি শব্দে ঈ নেই সত্যি, কিন্তু বিদেশি শব্দে অনেক ক্ষেত্রেই ঈ অপরিহার্য, যেমন: আ'মীন। আমিন বলা হলে অর্থ পাল্টে যাচ্ছে। ঈদ কে ইদ লেখা হলে তাতে আর আনন্দ থাকে না। Sea কে শুধু সি লিখলে কি মানাবে? Mean কে মীন না লিখে মিন লেখা হলে মানায় কি?

বাংলা একাডেমিকে এটা আবারও ভাবতে হবে।

এগিয়ে চলুন- আপনি জিতবেন।

বিজ্ঞানই বলেছে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ্য পুরুষ একবার সহবাসে যে পরিমান বীর্য নির্গত করে তাতে ২০-৩০ কোটিস্পার্ম নির্গত হয়, ( স্থান পেলে ২০-৩০ কোটি বাচ্ছা তৈরি হতো) এই ২০-৩০ কোটি স্পার্ম, মায়ের ওভামের দিকে পাগলের মত ছুটতে ছুটতে পৌঁছায় ৩০০-৫০০ মাত্র, আর বাকিরা এই "ছুটে চলার" দৌড়ে ক্লান্ত, শ্রান্ত অথবা পরাজিত হয়ে মারা যায়, বিলীন হয়ে যায়।

এই ৩০০-৫০০ স্পার্ম,
যেগুলো ডিম্বানুর কাছে যেতে পেরেছে তাদের মধ্যে মাত্র একটি,মহা শক্তিশালী স্পার্ম ডিম্বানুকে ফার্টিলাইজ করে অথবা ডিম্বানুতে আসন গ্রহন করে, সেই ভাগ্যবান স্পার্মটি হচ্ছেন আপনি কিংবা আমি-অথবা আমরা সবাই।
কখনও কি এই মহাযুদ্ধের কথা মাথায় এনেছেন?

আপনি তখন দৌড়েছিলেন,
যখন আপনার চোখ,হাত পা মাথা ছিল না! তবু আপনি জিতেছিলেন।

আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন সার্টিফিকেট ছিল না! মস্তিষ্ক ছিল না, তবুও আপনি জিতেছিলেন।

আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার কোন শিক্ষা ছিল না, দৌড়েছিলেন কারও সাহায্য ছাড়া, তবু আপনি জিতেছিলেন।

আপনি তখন দৌড়েছিলেন, যখন আপনার একটি গন্তব্য ছিল এবং সেই গন্তব্যের দিকে উদ্দেশ্য ঠিক রেখে একা একাগ্র চিত্তে দৌড়িয়ে ছিলেন এবং শেষ অবধি আপনি জিতেছিলেন।

আর আজ!
আপনি কিছু একটা হলেই ঘাবড়ে যান, নিরাশ হয়ে পড়েন, কিন্তু কেন? কেন আপনি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন।

এখন আপনার
বন্ধু বান্ধব, ভাই বোন , সার্টিফিকেট সবকিছু আছে। হাত-পা আছে, শিক্ষা আছে, প্ল্যান করার মস্তিষ্ক আছে, সাহায্য করার মানুষ আছে, তবুও আপনি আশা হারিয়ে আশা ছেড়ে নিরাশায় দুলছেন।

যখন আপনি জীবনের প্রথম দিনে হার মানেন নি, ৩০ কোটি স্পার্মের সাথে মরণপণ যুদ্ধ করে ক্রমাগত দৌড় প্রতিযোগিতায় কোন কিছুর অবলম্বন ছাড়া শুধু একা একাই জিতেছেন।

সেখানে আজ!
আপনি কেন হারবেন? কেন হার মানবেন? আপনি শুরুতে জিতেছেন, শেষে জিতেছেন, মাঝপথেও আপনি জিতবেন।

সবচাইতে বেশী কি চান?
মূল্য দিন, বিরামহীন লেগে থাকুন- আপনি জিতবেন।
কারণ, আপনার_জন্ম_সৃষ্টির_লক্ষেই। এগিয়ে চলুন!

ডাঃ মরিস বুকাইলী কেন মুসলিম হলেন?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, ফ্রাঁসোয়া মিত্রা প্রেসিডেন্ট পদে থাকেন ১৯৮১-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। তিনি তার পদে থাকাকালীন সময়ে আশির দশকের শেষের দিকে ফিরাউনের মমিকে আতিথেয়তার জন্য মিসরের কাছে অনুরোধ জানালেন। ফ্রান্স তাতে কিছু প্রত্নতাত্তিক গবেষণা করতে চাইল। মিসরের সরকার তাতে রাজি হল। কাজেই কায়রো থেকে ফিরাউনের যাত্রা হল প্যারিস! প্লেনের
সিড়ি থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তার মন্ত্রীবর্গ ও ফ্রান্সের সিনিয়র অফিসারগণ লাইন দিয়ে দাড়ালেন এবং মাথা নিচু করে ফিরাউনকে স্বাগত জানালেন !!

ফিরাউনকে জাঁকালো প্যারেডের মাধ্যমে যখন রাজকীয়ভাবে বরণ করে, তার মমিকে ফ্রান্সের প্রত্নতাত্তিক কেন্দ্রের একটা বিশেষ ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হল, যেখানে ফ্রান্সের
সবচেয়ে বড় সার্জনরা আছেন এবং তারা ফিরাউনের মমিকে অটপ্সি/ময়নাতদন্ত করে সেটা স্টাডি করবে ও এর গোপনীয়তা উদঘাটন করবে। মমির উপর গবেষণার জন্য প্রধান সার্জন ছিলেন প্রফেসর মরিস বুকাইলি। থেরাপিস্ট যারা ছিলেন তারা মমিটাকে পুনর্গঠন করতে চাচ্ছিল, আর ডা. মরিস বুকাইলি দৃষ্টি দিচ্ছিলেন যে – কিভাবে এই ফিরাউন মারা গেল!

পরিশেষে, রাতের শেষের দিকে ফাইনাল রেজাল্ট আসলো! ‘তার শরীরে লবণ অবশিষ্ট ছিল৷’ এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে সে (ফিরাউন) ডুবে মারা গিয়েছিল এবং তার শরীর ডুবার পরপরই সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র [নীল নদ ] থেকে তুলে আনা হয়েছিল! তারপর লাশটা সংরক্ষণ করার জন্য দ্রুত মমি করা হল৷

এখানে একটা ঘটনা প্রফেসর মরিসকে হতবুদ্ধ করে দিল, যে কিভাবে এই মমি অন্য মমিদের তুলনায় বিলকুল অরক্ষিত অবস্থায় থাকল, যদিওবা এটা সমুদ্র থেকে তোলা হয়েছে, [কোন বস্তু যদি আদ্র অবস্থায় থাকে, ব্যাকটেরিয়া ঐ বস্তুকে দ্রুত ধ্বংস করে দিতে পারে, কারণ আদ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করতে পারে ! ]
ডা. মরিস ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করলেন; যাতে তিনি বললেন:- এটা একটা নতুন আবিস্কার। সেই সময় তাকে একজন তার কানে ফিসফিসিয়ে বলল: মুসলিমদের এই ডুবে যাওয়া মমি সম্পর্কে ঝট করে আবার বলতে যেও না! কিন্তু তিনি দৃঢ়ভাবে এর সমালোচনা করলেন এবং এটা আজব ভাবলেন যে, এরকম একটা বিশাল আবিস্কার যেটা আধুনিক বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য সহায়তা করবে সেটা জানানো যাবেনা !! কেউ একজন তাকে বলল :-
কুরআনে বলা আছে যে ফিরাউনের ডুবা ও তার লাশ সংরক্ষণের ব্যাপারে। এই ঘটনা শুনে ডা. মরিস বুকাইলি বিস্মিত হয়ে গেলেন এবং প্রশ্ন করতে লাগলেন, এটা কিভাবে সম্ভব??! এই মমি পাওয়া গেলো ১৮৮১ সালে, আর কুরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে !! আরবেরা প্রাচীন মিসরীয়দের মমি করার পদ্ধতিতো জানতোই না, মাত্র কয়েক দশক আগে আমরা জানলাম !!

ডা. মরিসবুকাইলি সেই রাতে ফিরাউনের লাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে রইলেন, আর গভীরভাবে ভাবছিলেন যেটা তার কলিগ তার কানে ফিশফিশিয়ে বলে গেল যে মুসলিমদের কুরআনে ফিরাউনের লাশের সংরক্ষণের কথা !! বাইবেল ফিরাউন কর্তৃক মুসা (আ) পিছু নেয়ার কথা বলা আছে কিন্তু, ফিরাউনের লাশের কি হলো, সেটা সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। তিনি নিজেকেই প্রশ্ন করছিলেন যে, এটা কি সম্ভব যে এই মমি যার সেই (ফিরাউন) কি মুসার (আ) পিছু নিয়েছিল? এটা কি ধারণা করা যায় যে মুহাম্মদ (স) ১৪০০ বছর আগেই এটা সম্পর্কে জানতেন?? ..

ডা. মরিস বুকাইলি সেই রাতে ঘুমাতে পারলেননা, তিনি তাওরাত আনালেন এবং সেটা পড়লেন।
তাওরাতে বলা আছে-
পানি আসলো এবং ফিরাউনের সৈন্য এবং তাদের যানবাহনগুলোকে ঢেকে দিল, যারা সমুদ্রে ঢুকল তাদের কেউই বাঁচতে পারলেননা। ডা. মরিস বুকাইলি হতবুদ্ধ হয়ে গেলেন যে বাইবেলে লাশের সংরক্ষণের ব্যাপারে কিছুই বলা নেই!! তিনি তার লাগেজ বাধলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন
যে যে তিনি মুসলিম দেশে যাবেন এবং সেখানে প্রখ্যাত মুসলিম ডাক্তারদের
সাক্ষাৎকার নিবেন, যাদের অটোপ্সি বিশেষজ্ঞ। তার সেখানে পৌছনোর পর ফিরাউনের লাশ ডুবার পর সংরক্ষণের যে আবিষ্কার তিনি যেটা পেয়েছেন সেটা নিয়ে বললেন। তাই একজন বিশেষজ্ঞ (মুসলিম) পবিত্র কুরআন খুললেন এবং আয়াতটা ডা. মরিসকে পড়ে শুনালেন, যেখানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’য়ালা বলেনঃ- “ অতএব আজকের দিনে বাঁচিয়ে দিচ্ছি আমি তোমার দেহকে, যাতে তা তোমার পশ্চাদবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পারে। আর নিঃসন্দেহে বহু লোক আমার মহাশক্তির প্রতি লক্ষ্য করে না।”
-[আল-কুরআন; সুরাঃ ইউনূস, আয়াতঃ ৯২]

তিনি এই আয়াতের দ্বারা খুবই প্রভাবিত হয়ে পড়লেন এবং তিনি তার জোর গলায় চিৎকার দিয়ে বললেন:- আমি ইসলামে প্রবেশ করেছি, এবং আমি এই কুরআনে বিশ্বাসী। [সুবহানাল্লাহ]

ডা. মরিস বুকাইলি ফ্রান্স ফিরে গেলেন এক
ভিন্ন অবস্থায়। ফ্রান্সে ১০ বছর তিনি আর কোন ডাক্তারি প্র্যাকটিস্ করেন নি বরং এই সময়েই (টানা ১০ বছর ধরে) তিনি আরবী ভাষা শিখেছেন। তিনি পবিত্র কুরআনে কোন বৈজ্ঞানিক দ্বিমত আছে কিনা সেটা খুজেছেন, তারপর তিনি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতের অর্থ বুঝলেন যেটাতে বলা আছেঃ- “এতে মিথ্যার প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ
থেকে অবতীর্ণ।”
[সুরাঃ হা-মীম সাজদাহ, আয়াতঃ ৪২]

১৯৮৬ সালে ডা. মরিস বুকাইলি একটা বই
লেখেন যেটা পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের টনক নাড়িয়ে দেয়। যেটা বেস্ট সেলার হয়। বইটি প্রায় ৫০ টিরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে!! বইটির নামঃ-
“বাইবেল, কুরআন এবং বিজ্ঞান ৷ ”

তিনি থিওরি অফ এভুলুশনকে চ্যালেঞ্জ করে
চমৎকার একটি বই লেখেন, যার নাম দেন-
” What is the Origin of Man? ”.................

ইমাম আবু হানিফা (র.) (৭০২-৭৭২ খ্রিষ্টাব্দ)

অধঃপতনের যুগে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা নিয়ে যে সকল মনীষী পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন, পার্থিব লোভ-লালসা ও ক্ষমতার মোহ যাদের ন্যায় ও সত্যের আদর্শ থেকে বিন্দুমাত্র পদঙ্খলন ঘটাতে পারেনি; যারা অন্যায় ও অসত্যের নিকট কোনো দিন মাথা নত করেননি, ইসলাম ও মানুষের কল্যাণে সারাটা জীবন যারা পরিশ্রম করে গিয়েছেন, সত্যকে আঁকড়ে থাকার কারণে যারা জালেম সরকার কর্তৃক অত্যাচারিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত; এমনকি কারাগারে নির্মমভাবে প্রহৃত হয়েছেন, ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁদের অন্যতম।

উমাইয়া খলিফাগণের দুঃশাসন, কুশাসন ও স্বৈরাচারী কার্যকলাপে সমগ্র মুসলিম জাহান আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের দ্বারা এমন সব জঘন্য কাজ সম্পাদিত হয়েছিল যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। তাদের নিষ্ঠুর কার্যকলাপ কেবল নাগরিকদের ধন-সম্পদ ও জীবনের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হয়নি, নারী জাতির মান-সমমান ও সতীত্বও ধূলায় ধূসরিত হয়ে গিয়েছিল। মহানবীর আদর্শ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শুধু ভুলুষ্ঠিতই করা হয়নি; চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা.)-এর নামে রীতিমতো জুমার নামাজে প্রকাশ্য মিম্বরে দাঁড়িয়ে অভিশাপ বর্ষণ করা হতো। খিলাফতের স্থান দখল করেছিল রাজতন্ত্র। অত্যাচারের মূর্ত প্রতীক, যুগের অভিশাপ ও কলঙ্ক ইয়াযিদ ইবনে যিয়াদ ও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের নিষ্ঠুর তরবারির আঘাতে সামান্য কথার জন্য হাজার হাজার মুসলমানের মস্তক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। লৌহদণ্ডের প্রতাপে উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণ এমন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল যেখানে কোনো প্রতিবাদ তো দূরের কথা কোনো প্রকার সংশোধনের কথা মুখে উচ্চারণ করাই ছিল নিজের মৃত্যু ডেকে আনা। তরবারির ভয় দেখিয়ে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার সমস্ত পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এক কথায় উমাইয়া বংশীয় শাসকগণ ও তাদের বর্বর গভর্নরগণ মুসলিম জাহানে নিষ্ঠুরতার এমন এক নজির স্থাপন করেছিল যা পৃথিবীর ইতিহাসে আজও বিরল।

ঠিক এমনি এক যুগসন্ধিক্ষণে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসলামের বিবেকী কণ্ঠ ও অন্যায়ের প্রতিবাদী ইমাম আবু হানিফা (র.)। উল্লেখ্য যে উমাইয়া বংশীয় খলিফাগণের মধ্যে কেবল ওয়ালিদ এবং খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (র.) এর শাসনকালই ছিল ইসলাম ও ব্যক্তি স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ।

ইমাম আবু হানিফা (র.) ৮০ হিজরি মোতাবেক ৭০২ খ্রিষ্টাব্দে কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম হলো নু’মান। পিতার নাম ছাবিত এবং পিতামহের নাম জওতা। তাঁর বাল্যকালের ডাক নাম ছিল আবু হানিফা। তিনি ইমাম আজম নামেও সর্বাধিক পরিচিত। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইরানের অধিবাসী ছিলেন। পিতামহ জওতা জন্মভূমি পরিত্যাগ করে তৎকালীন আরবের সমৃদ্ধিশালী নগর কুফায় এসে বাসস্থান নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) বাল্যকালে লেখাপড়ার কোনো সুযোগ পাননি। কারণ তখন কুফায় মারওয়ানী খিলাফতের যুগ। আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান ছিলেন খিলাফতের প্রধান এবং যুগের অভিশাপ, নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ ছিলেন ইরাকের শাসনকর্তা। দেশের ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ইমাম আবু হানিফা (র.) ১৪-১৫ বছর বয়সে একদিন যখন বাজারে যাচ্ছিলেন, পথিমধ্যে তৎকালীন বিখ্যাত ইমাম হযরত শা’বী (র.) তাঁকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে বালক, তুমি কি কোথাও লেখাপড়া শিখতে যাচ্ছ? উত্তরে তিনি অতি দুঃখিত স্বরে বললেন, ‘আমি কোথাও লেখাপড়া শিখি না।’ ইমাম শা’বী (র.) বললেন, ‘আমি যেন তোমার মধ্যে প্রতিভার চিহ্ন দেখতে পাচ্ছি। ভালো আলেমের নিকট তোমার লেখাপড়া শেখা উচিত।’

ইমাম শা’বী (র.)-এর উপদেশ ও অনুপ্রেরণায় ইমাম আবু হানিফা (র.) ইমাম হামমাদ (র.) ইমাম আতা ইবনে রবিয়া (র.) ও ইমাম জাফর সাদিক (র.)-এর মতো তৎকালীন বিখ্যাত আলেমগণের নিকট শিক্ষা লাভ করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, ইলমে কালাম, আদব প্রভৃতি বিষয়ে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। জ্ঞান লাভের জন্য তিনি মক্কা, মদিনা, বসরা এবং কুফার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত আলেমগণের নিকট পাগলের ন্যায় ছুটে গিয়েছিলেন। বিভিন্ন স্থান থেকে হাদিসের অমূল্য রত্ন সংগ্রহ করে স্বীয় জ্ঞানভান্ডার পূর্ণ করেন। উল্লেখ্য যে, তিনি চার সহস্রাধিক আলেমের নিকট শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ইমাম মালেক (র.)-এর নিকটও তিনি হাদিস শিক্ষা লাভ করেন। ইমাম মালেক (র.) যদিও বয়সের দিক থেকে তাঁর চেয়ে ১৩ বছরের ছোট ছিলেন; তথাপি ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁকে অশেষ সমমান করতেন এবং ইমাম মালেক (র.) ও ইমাম আবু হানিফা (র.) কে শিক্ষকের ন্যায় সমমান দেখাতেন। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আদব-কায়দা এমনই হয়ে থাকে। শিক্ষকগণের প্রতি ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর এত ভক্তি শ্রদ্ধা ছিল যে তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন, ‘আমার শিক্ষক ইমাম হামমাদ (র.) যত দিন জীবিত ছিলেন তত দিন আমি তাঁর বাড়ির দিকে পা মেলে বসিনি। তার কারণ, আমার ভয় হতো শিক্ষকের প্রতি আমার বেয়াদবি হয়ে যায় কি না।’

কারো কারো মতে, ইমাম আবু হানিফা (র.) তাবেয়ী ছিলেন। সাহাবাগণের যুগ তখন প্রায় শেষ হলেও কয়েকজন সাহাবি জীবিত ছিলেন। ১০২ হিজরিতে তিনি যখন মদিনা গমন করেন তখন মদিনায় দুজন সাহাবি হযরত সোলাইমান (রা.) ও হযরত সালেম ইবনে সুলাইমান (রা.) জীবিত ছিলেন এবং ইমাম আবু হানিফা (র.) তাঁদের দর্শন লাভ করেন। কিন্তু অনেকের মতে, তিনি কোনো সাহাবির দর্শন পাননি। তবে তাবে, তাবে তাবেয়ী হওয়ার ব্যাপারে কোনো মতবিরোধ নেই। ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর শিক্ষকগণ প্রায় সবাই ছিলেন তাবেয়ী। ফলে হাদিস সংগ্রহের ব্যাপারে তাঁদের মাত্র একটি মধ্যস্থতা অবলম্বন করতে হতো। তাই তাঁর সংগৃহীত হাদিসসমূহ সম্পূর্ণ ছহীহ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তাফসির ও হাদিসশাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতা ও পাণ্ডিত্য থাকা সত্ত্বেও ফিকাহশাস্ত্রেই তিনি সর্বাধিক খ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের ভিত্তিতে বিবিধ বিষয়ে ইসলামি আইনগুলোকে ব্যাপক ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করেছেন। বর্তমান বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মুসলমান হানাফি মাজহাবের অনুসারী। ফিকাহশাস্ত্রে তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও অবদানের জন্যই মুসলিম জাতি সত্যের সন্ধান অনায়াসে লাভ করতে পেরেছে। ফিকাহশাস্ত্রের উন্নতির জন্য তিনি ৪০ সদস্যবিশিষ্ট একটি সমিতি গঠন করেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) ছিলেন সমিতির প্রধান। সমিতির সদস্যদের মধ্যে ইমাম জাফর সাদিক, হাব্বান, ইমাম মুহামমদ ইউসুফ, ইয়াহ ইয়া ইবনে আবি জায়েদা, ইমাম মুহামমদ, ইউসুফ ইবনে খালেদের নাম উল্লেখযোগ্য। ইসলামের বিভিন্ন আইন নিয়ে সমিতিতে স্বাধীনভাবে আলোচনা হতো। প্রত্যেকেই কোরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করতেন। অতঃপর সর্বসমমতিক্রমে সঠিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো এবং তা লিপিবদ্ধ করা হতো। সুদীর্ঘ ৩০ বছর কাল ইমাম আবু হানিফা (র.) ও অন্যদের আপ্রাণ চেষ্টা ও সাধনার ফলে ফিকাহশাস্ত্রের উন্নতি সাধিত হয়। তিনি তাঁর শিক্ষকতা জীবনে পৃথিবীতে হাজার হাজার মুফাচ্ছির, মুহাদ্দিস ও ফকীহ তৈরি করে গিয়েছেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে যারা ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁদের মধ্যে ইমাম মুহামমদ (র.), ইমাম আবু ইউসুফ (র.) ও ইমাম যুফার (র.) অন্যতম।

ইমাম আবু হানিফার (র.) চরিত্র ছিল বহু গুণে গুণান্বিত। তিনি ছিলেন আত্মসংযমী, মহান চরিত্রবান, পরহেজগার, উদার, দানশীল, অতিশয় বিচক্ষণ এবং মুত্তাক্বিন। তিনি ছিলেন হিংসা, লোভ, ক্রোধ, পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে পবিত্র। বিনা প্রয়োজনে কোনো কথা বলতেন না। তিনি সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। এতে এটাই বোঝা যায় যে, তিনি সারারাত আল্লাহর ইবাদত, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণায় মগ্ন থাকতেন। কতিপয় কর্মচারীর দ্বারা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ব্যবসায় যাতে হারাম অর্থ উপার্জিত না হয় সে জন্য তিনি কর্মচারীদের সব সময় সতর্ক করতেন। একবার তিনি দোকানে কর্মচারীদের কিছু কাপড়ের দোষ-ত্রুটি দেখিয়ে বললেন, ‘ক্রেতার নিকট যখন এগুলো বিক্রি করবে তখন কাপড়ের এ দোষগুলো দেখিয়ে দেবে এবং এর মূল্য কম রাখবে।’ কিন্তু পরবর্তী কর্মচারীগণ ভুলক্রমে ক্রেতাকে কাপড়ের দোষত্রুটি না দেখিয়েই বিক্রি করে দেন। এ কথা তিনি শুনতে পেরে খুব ব্যথিত হয়ে কর্মচারীদের তিরস্কার করেন এবং বিক্রীত কাপড়ের সমুদয় অর্থ সদকা করে দেন। তাঁর সততার এ রকম শত শত ঘটনা রয়েছে।

তিনি কখনো সরকারি কোনো অনুদান গ্রহণ করেননি। নিজের ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীনতাকে ঊর্ধ্বে স্থান দিতেন তিনি। উমাইয়া বংশীয় খলিফাদের অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আস্তে আস্তে সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মারওয়ানের শাসনামলে আব্বাসীয় খিলাফতের দাবিদারদের আন্দোলন ছিল তুঙ্গে। এ আন্দোলন সমগ্র ইরাক ও কুফায় উমাইয়া বংশীয় খলিফা মারওয়ানের সিংহাসন কাঁপিয়ে তুলেছিল। ১২৯ হিজরি মারওয়ান তাঁর বিচক্ষণ আমলা ইয়াজিদ ইবনে ওমর ইবনে হুরায়রাকে কুফার গভর্নর নিযুক্ত করেন। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা শাসনকার্যে ধর্মীয় নেতাদের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন। তাই তিনি ক্ষমতা ও অর্থের লোভ দেখিয়ে ধর্মীয় নেতাদের শাসনকার্যে জড়িত করার চেষ্টা চালান এবং ইতিমধ্যে কয়েকজনকে বড় বড় রাজকীয় পদও দান করেন। তখন সমগ্র ইরাক ও কুফায় ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর সুনাম, সততা ও জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রা ইমাম আবু হানিফা (র.) কে প্রধান বিচারপতির (কাজী) পদ গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান। ইমাম আবু হানিফা (র.) বুঝতে পেরেছিলেন যে, এটা হলো উমাইয়া খিলাফতকে দীর্ঘায়িত করার একটি গভীর ষড়যন্ত্র। তিনি এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, প্রাদেশিক জালিম গভর্নরদের অধীনে কাজীর পদ গ্রহণ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।

বিচারকার্যে উমাইয়া শাসকগণ প্রভাব ফেলতে পারে। তাদের অধীনে কাজীর পদ গ্রহণ করার অর্থ হবে সত্য ও ন্যায়কে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতা ও অর্থের মোহে উমাইয়া জালিম শাসকগোষ্ঠীর গোলামি করা। পূর্বেই বলা হয়েছে যে, তিনি সরকারি কোনো সাহায্য গ্রহণ করতেন না এবং অবৈধ ক্ষমতা ও অর্থের লোভ-লালসা তাঁকে কোনো দিন সপর্শ করতে পারেনি। তাই সত্যকে প্রকাশ করতে তিনি কাউকে কখনো ভয় করতেন না। ইয়াজিদ ইবনে হুরায়রার আমন্ত্রণ পেয়ে শুধু প্রত্যাখ্যানই করলেন না বরং সুসপষ্ট ভাষায় বলেছিলেন, ‘প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করা তো দূরের কথা মোটা অঙ্কের বেতন দিয়ে ইয়াজিদ যদি মসজিদের দরজা জানালাগুলো গোনার মতো হালকা দায়িত্বও দেয় তথাপি এ জালেম সরকারের অধীনে আমি তা গ্রহণ করব না।’ এতে ইয়াজিদ ক্ষিপ্ত হয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.) কে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করেন। এরপর কারাগারে তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু এতেও তিনি রাজি না হওয়ায় কারাগারে প্রতিদিন তাঁকে বেত্রাঘাত করা হতো। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) নির্যাতনের ভয়ে জালিম সরকারের নিকট মাথা নত করেননি। অবশষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি মক্কায় চলে আসেন।

১৩১ হিজরিতে উমাইয়া শাসনের অবসান ঘটলে আব্বাসীয় খিলাফতের সূচনা হয়। ইমাম আবু হানিফা (র.) মক্কা থেকে কুফায় ফিরে আসেন। আব্বাসীয়গণ ইতিপূর্বে আহলে বাইয়াতদের পক্ষে আন্দোলন করলেও, ক্ষমতা লাভের পর আহলে বাইয়াতদের প্রতি খড়গহস্ত হয়ে ওঠেন এবং ধর্মীয় নেতাদের প্রতি নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন চালাতে শুরু করেন। আব্বাসীয়গণ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী উমাইয়া বংশীয়দের প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমন কি উমাইয়া খলিফাদের কবর খুঁড়ে তাঁদের অস্থি পাঁজর তুলে এনে জ্বালিয়ে ফেলেছিল। আব্বাসীয় বংশীয় খলিফা মনসুর সিংহাসনে বসে আহলে বাইয়াত ও আলেম সমাজের প্রতি অত্যাচারের স্টিম রোলার চালান।

১৪৫ হিজরিতে মুহামমদ নাফসে জাকিয়া খলিফা মনসুরের অনৈসলামিক ও অমানবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধে শহীদ হন। ইমাম মালেক (র.) ও ইমাম আবু হানিফা (র.)সহ প্রায় সকল ধর্মীয় নেতা মুহামমদ নাফসে জাকিয়ার পক্ষে ছিলেন। নাফসে জাকিয়া শহীদ হওয়ার পর তাঁর ভ্রাতা ইব্রাহীম বিদ্রোহের পতাকা স্বহস্তে তুলে নেন এবং তৎকালীন দীনদার মুসলমান ও আলেম সমাজ ইব্রাহীমের পতাকাতলে সমবেত হতে লাগলেন। জানা যায়, একমাত্র কুফা নগরেই বিশ লক্ষ মুসলমান মনসুরের বিরুদ্ধে মুহমমদ ইব্রাহীমের পক্ষে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল। ইমাম আবু হানিফা (র.) মুহামমদ ইব্রাহীমকে গোপনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিলেন এবং সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। যুগের নিষ্ঠুর ও জালেম মনসুর গোপনে বহু উপঢৌকন পাঠিয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.) কে হাত করতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) এগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশেষে ১৪৬ হিজরিতে খলিফা মনসুর ইমাম আবু হানিফা (র.) কে বাগদাদে খলিফার দরবারে তলব করেন। তিনি খলিফার দরবারে উপস্থিত হলে তাঁকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু ইমাম আবু হানিফা (র.) জালেম সরকারের অধীনে এ পদ গ্রহণ করতে রাজি হলেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা মনসুরের গভীর ষড়যন্ত্র। এছাড়া এ পদ গ্রহণ করার অর্থ হবে ন্যায়, ইনসাফ ও ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে জালেমের পূজারি করা। তাই ইমাম আবু হানিফা (র.) খলিফা মনসুরকে বললেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করার যোগ্য নই।’ এতে খলিফা রাগান্বিত স্বরে বললেন, আপনি মিথ্যাবাদী। প্রত্যুত্তরে ইমাম সাহেব বললেন, ‘আপনার কথা যদি সত্যি হয় (অর্থাৎ আপনার কথানুযায়ী আমি যদি মিথ্যাবাদী হই) তাহলে আমার কথাই সঠিক। কারণ একজন মিথ্যাবাদী রাষ্ট্রের ‘প্রধান বিচারপতি’ পদের যোগ্য নয়।’

অতঃপর খলিফা মনসুর কোনো উত্তর দিতে না পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে ইমাম আবু হানিফা (র.) কে গ্রেফতার করে কারাগারে বন্দি করার নির্দেশ দেন। কারাগারে বসেও ইমাম আবু হানিফা (র.) ফিকাহশাস্ত্রে তাঁর কঠোর সাধনা চালিয়েছিলেন। কারাগারে বসেই তিনি বিভিন্ন কঠিন মাসআলার জবাব দিতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে শত শত মানুষ এসে কারাগারেই মাসআলা শিক্ষা লাভ করে যেতেন। ইমাম আবু ইউসুফ (র.) লিখেছেন, ইমাম আবু হানিফা (র.) কেবল কারাগারে বসেই ১২ লাখ ৯০ হাজারের অধিক মাসআলা লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এরপর খলিফা মনসুর একদিন খাদ্যের সাথে বিষ মিশিয়ে দেন। ইমাম আবু হানিফা (র.) বিষক্রিয়া বুঝতে পেরে সিজদায় পড়ে যান এবং সিজদা অবস্থায়ই তিনি ১৫০ হিজরিতে এ নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

ইমাম আবু হানিফা (র.)-এর মৃত্যুর সংবাদ বিদ্যুতের গতিতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং দেশের সর্বস্তরের লোকজন মৃত্যুর সংবাদ শুনে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। কথিত আছে, তাঁর জানাজায় পঞ্চাশ হাজারের অধিক লোক অংশগ্রহণ করেছিল; কিন্তু লোকজন আসতে থাকায় ৬ বার তাঁর জানাজা পড়া হয়েছিল। তাঁর অসিয়ত অনুযায়ী বিজরান কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

একুশের আক্ষেপানুরাগ

বেশ কয়েক বছর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির অঙ্গীকার ছিল অফিস আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিদেশী ভাষার ব্যবহার কমানো, ব্যানার, ফেস...