বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

দু'টি কবিতা।

০১.
ঝলমলে রঙ, চওড়া কাজল
অনেক রাতের কান্না ঢাকে,
বেশ্যাদেরও হয়তো কোথাও
একটা প্রথম প্রেমিক থাকে।।

০২.
তুমি চাইলে এ মৃত প্রেম   
আবারো নতুন জীবন পাবে,
ন‌ইলে আমার নিস্তব্ধ রাত
নীরবেই কেটে যাবে।

রবিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৭

ক্ষমা করো প্রিয় কবি।

কার কাছে কি রকম মনে হয় জানিনা, তবে আমার কাছে সবসময়ই মনে হয় বাংলাদেশে কাজী নজরুলের প্রকৃত অবস্থান একজন রাষ্ট্রপতির মতোই। নামে মাত্র 'জাতীয় কবি'। কিন্তু ফোকাসটা সবসময় আরেকজনের দিকে!

মুসলিমদের পক্ষ নিয়ে কোন একটা লাইন না লেখার পরও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের মানুষের কাছে 'অসাম্প্রদায়িক' একজন ব্যক্তি।
অথচ হিন্দুদের নিয়ে শতশত শ্যামাসংগীত লেখা নজরুল একজন সাম্প্রদায়িক।
কারণ তিনি বলে দিয়েছিলেন- "মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।"
তাঁর 'হিন্দু না মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন" উক্তি মুসলিম আস্তিকতার আড়ালে চাপা পড়ে গেছে।

রবীন্দ্রনাথকে শুধু অসাম্প্রদায়িক না, অসাম্প্রদায়িক 'চেতনা'র প্রবাদ পুরুষ বলা হয় আমাদের দেশে।
যে ব্যক্তি সারাজীবন বজরায় বজরায় কাটিয়েছেন, যিনি কোন একদিনও হাজতবাস করেননি তাঁর নামের সাথে চেতনা যায়!

অথচ যে মানুষটা কৈশোর থেকেই সেনাবাহিনী আর বিদ্রোহের উপর, যে মানুষটার অনেকগুলো দিন কেটেছে নিপীড়ন-নির্যাতন-জেলে, তাঁর সাথে চেতনা যায়না!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার প্রত্যক্ষ বিরোধী ব্যক্তিকে নিয়ে খোঁদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই যতটা মাতামাতি, আমি হলফ করে বলতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় শুয়ে থাকা জাতীয় কবিকে নিয়ে সে মাতামাতির পরিমাণ দশ ভাগের একভাগও না।

দুর্ভাগ্য নজরুলের না, দুর্ভাগ্য আমাদের।
আমরা এই মহান পুরুষকে সম্মান দিতে পারছিনা।

আমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরোধী না। তিনি তাঁর অবস্থানে ঠিক ছিলেন। আমরা আমাদের অবস্থানে ঠিক নাই। জাতীয় কবির মান মর্যাদার কথা বলতে গিয়ে কবিগুরুকে টানতে হলো।
দুঃখিত কবিগুরু!

নজরুল চলে যাওয়ার পর আর কোন নজরুল তৈরি হয়নি।একসময় কেউ কেউ হওয়ার চেষ্টা করেছে। সে চেষ্টাটাও এখন বিলুপ্ত।

'যবে উৎপীড়িতের রুল আকাশে বাতাসে ধ্বণিবেনা...'
উৎপীড়িতের রোল এখনো আছে।অত্যাচারীর খড়গ কৃপা কোনদিনও বন্ধ হয়নি। তারপরও নজরুলের মতো কেউ অশান্ত হয়নি। রক্ত জমে গেছে সবার।

এদেশের জন্মকালীন প্রসববেদনায় অনেকেই 'কারার ঐ লৌহ কপাট' ভেঙে লোপাট করার চেষ্টা করেছিল। তরুণ ঈশানদের প্রলয় বিষাণ বাজানোর মতো শক্তি ছিল। এখন সবার মাঝেই ঝিম ঝিম অবস্থা। একটা ধ্বংস নিশান দেখলেই সবাই সন্ধাবেলার মুরগীর মতো ঘরে ঢুকে পড়ে।

'কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান আছে কার হিম্মত' লাইনগুলো এখন আর কোন মানবিক ডাকের সাথে যায়না।
কোথাও অবৈধ কোপাকুপির খেলায় এমন হিম্মৎওয়ালাদের অভাব পড়েনা!

'শিকল পরার ছল' এখন বাঙালীর রক্তে মিশে গেছে।
যৎসামান্য মানুষের পরানো শিকল পায়ে দিয়ে আমরা খুশি।
শিকল পরে মানুষ খুশি, শিকল পরিয়েও মানুষ খুশি।

আহা!
"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহীয়ান"-এজন্যই বোধহয় বিনা বিচারে রাস্তায় তিনটা মানুষ মারার জন্য ৫৪ টা গুলি করা হয়।
একটা গুলিতে তো কুকুরও মরে।মানুষের সম্মানে এতগুলো গুলি!

প্রিয় কবি, তুমি মহাত্মা গান্ধীর বিপক্ষেও দাঁড়াতে পেরেছিলে।
"দুধের শিশু চায়না স্বরাজ" বলে সমালোচনা করতে পেরেছিল।এখন আর সেদিন নেই।
চারপাশে শুধু তেল আর তেল।
নেতাকে তেলের সাগরে চুবানো হয় সকাল বিকাল।
দেশ অদ্ভূত "তেল চেইন" এ আবদ্ধ।

"চোখ ফেটে এল জল,
এমন করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?"
-এরকম করে বলা আর একটা মানুষও কি অবশিষ্ট আছে?
কোন কালে কোন কবি অভুক্ত শিশুদের দেখে কি এতো মমতা নিয়ে বলতে পারবে-
"ওদের ফেলে ওগো ধণী ওগো দেশের রাজা,কেমন করে জোটে মুখে মন্ডা-মিটাই-খাজা?"

এই অদ্ভূত মমতা, এই অদ্ভূত মানবপ্রেম শুধু এই একটা মানুষের কলমেই ছিল।

প্রায় ৩০০০ গান লেখা নজরুলকে গীতিকার হিসাবে অনেকেই মূল্যায়ন দিতে চাননা। নজরুল গবেষকদের মতে নজরুলের গানে প্রায় ৮২ রকমের রাগ ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে যা বিরল।

"আলগা করোগো খোঁপার বাঁধন", "প্রিয় এমনও রাত যেন যায়না বৃথায়", "শাওনও রাতে যদি স্মরণে আসে মোরে", "লাইনি তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোঁলো", "তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ".........

একেকটা গান যেন একেকটা মুগ্ধতা।
নজরুল সব বাদ দিয়ে একজন গীতিকার হিসেবেই বিখ্যাত হতে পারতেন, সব বাদ দিয়ে একজন সুরকার হিসাবেই বিখ্যাত হতে পারতেন। কিন্তু---

"মম একহাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তুর্য"...বাঁশের বাঁশরীর মাঝে নজরুলের আরেকটা সত্ত্বা প্রেম।

হয়তো তিনি জীবনান্দের মতো প্রেমের কবি হিসাবে স্বীকৃতি পাননি কিংবা আমরাই স্বীকৃতি দেইনি কিন্তু তাঁর কবিতার ভেতর যে একবার যাবে সে বুঝতে পারবে পরিশুদ্ধ প্রেম কাকে বলে।

"হারিয়ে গেছো অন্ধকারে পাইনি খুঁজে আর
তোমার আমার মাঝে এখন সপ্ত পারাবার"

"আজি বিদায়ের আগে,
তোমারে জানিতে আমারে জানাতে কত কি যে সাধ জাগে।"

"জানি মুখে মুখে হবেনা মোদের কোনদিনও জানাজানি,
বুকে বুকে শুধু বাজিবে বীণা বেদনার বীণাপাণি।"

বুক খালি করে দেয়া, মন উদাস করে দেয়া একেকটা কবিতা।
যে একবার 'চক্রবাক' পড়বে রোমান্টিকতার জন্য তার আর কোন কবিতার প্রয়োজন নেই।

কবির ছেলে যেদিন মারা যায় তার পরেরদিনই তিনি শিশুতোষ রম্য কবিতা লেখা শুরু করেন।

'লিচুচোর', 'খুকু ও কাঠবেড়ালী, "ঝিঙেফুল"....
কোথায় নেই এই কবি?

তবে একটা জায়গায় না গেলেই বোধহয় কবি ভালো করতেন।

"আমি যদি আরব হতাম মদিনার ঐ পথ
আমার উপর হেঁটে যেতেন নূর নবী হযরত।"
"ত্রিভূনের প্রিয় মুহাম্দ","তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে"-এই গানগুলো আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীলদের চুলকানীর কারণ হয়েছে।
তারা আস্তে করে নজরুল থেকে সরে গেছেন। নিজের ছেলে বাদ দিয়ে সৎ ছেলেকে কোলে নিয়েছেন।

বৃটিশ আমলেই নীরব হয়েছেন কবি। নীরব অবস্থায় পেয়েছেন পিশাচ পাকিস্তানী শাসন। পেয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের কিছুটা সময়ও। কিন্তু কিছু বলতে পারেননি।

কবি যদি এখন পর্যন্ত বেঁচে থাকতেন এবং সুস্থ থাকতেন তবে বিভিন্ন সময় ক্ষমতার অপব্যবহারে কিভাবে জ্বলে ওঠতেন জানিনা,ফেলালীর ঝুলন্ত লাশ দেখে কি বলতেন জানিনা, বুদ্ধিজীবিদের কলম বিক্রিতে কি প্রতিক্রিয়া দেখাতেন জানিনা, স্বঘোষিত ইসলামবিদ্বেষীদের নোংরামী এবং তাদেরকে পৃষ্টপোষকতায় কতটা ক্ষুব্ধ হতেন জানিনা, নারীর অসম্মানে কতটা কি করতেন জানিনা......
তবে একটা জিনিস জানি তাঁকে বারবার জেলে যেতে হতো। বৃটিশ রাজ তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলাতে পারেনি। হয়তো তাঁকে ফাঁসিতেও ঝুলতে হতো।

৪০ বছর বয়সে অনেকের সাহিত্য জীবন শুরু হয়। সেই ৪৩ বছর বয়সেই নিভে গেলেন কবি।
শতাব্দির শ্রেষ্ট ক্ষণজন্মা মানুষটাকে ধরল একটা ক্ষণজন্মা অসুখ। কে জানে হয়তো তাতে ভালোই হয়েছে কিনা। নয়তো যা সম্মান অবশিষ্ট আছে হয়তো সেটাও থাকতো না।

কবিকে একটা পন্থী হতে হতো।মাঝামাঝি থাকতে পারতেন না।

"আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়"-বলা কবি এত দ্রুত কলমগজৎ থেকে বিদায় নেবেন কে জানতো?

কে জানতো আমাদের "বুলবুলি নীরব" হয়ে যাবেন অর্ধশতাব্দি আগেই।

আমরা যা পেয়েছি তার থেকে হারিয়েছি অনেক অনেক বেশি।

এই ক্ষণজন্মা মহান মানবকে এই স্টুপিড জাতি প্রকৃত মূল্যায়ন কখনোই দিতে পারবেনা।
একটা সম্মানসূচক সিল মেরেই এ জাতি তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

তবু নজরুল থাকবেন নজরুল হয়েই। আর কেউ নজরুল হতে পারবেনা এতে নজরুলের সম্মানহানী হচ্ছেনা, নজরুল ওঠে যাচ্ছেন সম্মানের চূড়ায়।

আজ তোমার কবিতাও আমাদের রক্ত গরম করতে পারেনা;
আমাদের রক্ত এতটা ফ্রিজ হয়ে গেছে;

"তোমায় বড় ভালোবাসি কবি
হৃদয়পটে তোমার রঙিন ছবি।"

মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৭

জীবন কখনো ব্যর্থ হয় না!

জীবন কখনো ব্যর্থ হয়না, বরং আমাদের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা , ব্যর্থ হয়। জীবনের সারিবদ্ধ সোপান ক্রমিকমান অনুযায়ী মাড়ানো হয়নি বলে যে জীবন ব্যর্থ, এই  ধারনা আরোপিত, স্বতঃসিদ্ধ নয়।জীবনের রেডিমেড পোষাকে নিজেকে দেখতে আমাদের দুর্বলতা, নমনীয়তা আমাদের ‘সাধারন’ হওয়ার প্রবনতা এনে দেয়। ‘আমি অতি সাধারন’ বোধের আত্বপ্রবঞ্চনা আমাদের কাছে মানবীয় উচ্চতার মান নিয়ন্ত্রক।

জীবনের ‘স্টেজ’ গুলো কৃত্রিম, এখানে সংযোজন, বিয়োজন প্রতিনিয়ত আবর্তিত হয় সময়ের চক্রিক সিড়ি বেয়ে। হতে পারে দ্বিমাত্রিক-ত্রিমাত্রিক। কিন্তু ছোখ আটকে যাওয়া কিংবা আপাতত অপেক্ষাকৃত বেশি সুবিধাজনক মনে হওয়া সিড়িতেই আমাদের জীবনের লক্ষ্য নিক্ষিপ্ত হওয়ায় সেই সিড়ি টপকানোর মধ্যেই জীবনে কিছু হওয়া বা না হওয়া নির্ধারন করা হয়।

আমরা সবাই জীবন কে ২+২ = ৪ করে হিসাব করে অভ্যস্থ। কিন্তু জীবনের এই হিসেব ১+১+১+১ বা ১+৩ কিংবা ৩+১ সমান চার হতে পারে, সে হিসেবে আমরা অনভ্যস্ত। আমরা অস্বস্তি বোধ করি।

জীবন কখনো কাউকে প্রতারিত করে না, বরং ব্যক্তির কাছেই জীবনই পরাজিত হয়। 

জীবন কোন সুনির্দিষ্ট পথে হাটার কথা নয়, যদিও আমরা টেনে হেছড়ে নিই। জীবনের ক্ষরণ হয়, এক সময় সেই পথে হাটার, দৌড়ানোর সক্ষমতা আসলেও সেটা হয় কেবল বাধিত হওয়ার সুখ, জীবন নিজে আনন্দিত হয় না।

জীবনের জঠিলতার কারনে কাংখিত পথে হাটা সম্ভব হয় না, কিন্তু তার মানে এই না যে, নিজের স্বকীয়তা বিলুপ্ত করে দিতে হবে, আটপৌড় হয়ে যেতে হবে। জীবন মানে অনির্দিষ্টতা, নির্দিষ্ট খাপে বাক্সে ভরে তাকে বয়ে নিতে হবে তার কোন মানে হয় না, আর যদি হয়ও, খাপ বা বাক্সের ভিতরের অস্তিত্যটা যেন নিজেই খাপ খাওয়াতে গিয়ে খাপের সাথে, বাক্সের মধ্যে একাকার হয়ে না যায়। বাক্সের মধ্যে জীবন আর বাক্সবন্ধি হওয়া এক কথা নয়।

জীবনের আনন্দ, সুখ, লোভ, পুন্য, দূঃখ, কষ্ট, সৌন্দর্যরূপ, কদর্যতা, নীচতা, হীনতা- সবই আপেক্ষিক।

আপেক্ষিকতা কে বড় করে দেখে তাকে জীবনের ‘স্টান্ডার্ড’ হিসেবে মেনে নেওয়ার কোনই যুক্তি নেই।
সুতরাং-
Have the Most of it, Just be Honest with yourself.

একুশের আক্ষেপানুরাগ

বেশ কয়েক বছর থেকে ২১ শে ফেব্রুয়ারির অঙ্গীকার ছিল অফিস আদালতে শতভাগ বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা। বিদেশী ভাষার ব্যবহার কমানো, ব্যানার, ফেস...