স্কুল জীবনে প্রথম প্রেমপত্রখানা পাইয়া রীতিমত ভটকে গিয়াছিলাম। পুরো চিঠি জুড়েই ছিলো প্রেম ভালোবাসাপূর্ণ নানান কাব্যিক অভিব্যক্তি।
সেইসকল কাব্যিক অভিব্যক্তির শেষে প্রেরক লাল রঙের কালিতে গোটাগোটা হরফে লিখিয়াছিলেন,
'এই পৃথিবী যতদিন থাকিবে, তোমায় আমি ৩৩ দিন ভালোবাসিব'।
সেই পত্র পাঠ মাত্র আমি বেশ কিছুক্ষণ স্থির হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম। ছেলেটির প্রতি মনে মনে আমারও এক ধরণের ভালোলাগা ছিল।
কিন্তু এই জীবনে সে আমাকে কেবল ৩৩ দিন ভালোবাসিবে জানিয়া দুঃখের আর সীমা রহিল না। সেই সীমাহীন দুঃখেই বিন্দুমাত্র দেরী না করিয়া মুখের উপর আমি তাহাকে নাকচ করিয়া দিলাম। কিন্তু মনের ভেতর কী এক বিরহ ব্যথায় আবিষ্ট হইয়া রহিলাম কয়েকজনম।
তাহারও বহু বছরবাদে তাহার সহিত আমার হঠাৎ দেখা হইলো এক শপিংমলে । ইতোমধ্যে তাহার বিবাহ ও সন্তান হইয়াছে, আমার একি অবস্থা কিন্তু
এতোবছর বাদেও আমার প্রতি তাহার সেই মুগ্ধতার নাকি এতটুকুন ঘাটতি হয় নাই। সে আমাকে দেখিয়া কাতর কন্ঠে কহিল, 'তোমার কি মনে আছে নাযু? কিশোরীবেলার সেই প্রবল ভালোবাসাকে তুমি কি নির্দয়ভাবেই না প্রত্যাঘাত করিয়াছিলে?
ভালোবাসাপূর্ণ সেই হৃদয়খানা কতোখানি কষ্ট পেয়েছিল জানো?'
আমি বলিলাম, 'সে কী ভালোবাসা?
যে কিনা বলে, এই জীবনে আমি তোমাকে মাত্র তেত্রিশ দিন ভালোবাসিব, এ কীরকম ভালোবাসা ছিলো?'
আমার কথা শুনিয়া তাহার মুর্চ্ছা যাইবার উপক্রম হইল। সে তাহার নিজের মাথার তালুতে হস্ত বুলাইতে বুলাইতে কহিল,
'সে কী কথা? আমিতো তেত্রিশ দিন লিখি নাই।
আমি লিখিয়াছিলাম ততদিন।
সম্ভবত বে-খেয়ালে বা অতি আবেগে
'তত'র উপরে মাত্রা টানিতে ভুলিয়া গিয়াছিলাম।
ফলে 'তত' হয়ে গিয়াছিল '৩৩'!
আমি বিস্ফারিত নেত্রে তাহার দিকে তাকাইয়া ভারাক্রান্ত হৃদয়ে ভাবিলাম!!!
*'আহা, মাত্রা কী ভয়ানক!!* দুটি জীবনের একটি সফল প্রেমের গল্প চিরকালের জন্য কিরূপ ভয়ানক সমাপ্তির *মাত্রা* টানিয়া দিয়াছে..!!!